মৃতদের গীবত করার বিধান
গীবতের সংজ্ঞাঃ
শরীয়াতের পরিভাষায়,কারাে অনুপস্থিতিতে তার এমন দোষ - ত্রুটি বর্ণনা করা যা,সে শুনলে অসন্তুষ্ট হবে,তাকে গীবত বলে।
তা মুখে,লেখনীতে,অঙ্গভঙ্গি-দ্বারা বা অন্য কোন প্রকারে করা হােক না কেন,গীবত বলেই পরিগণিত হবে।সে কাফের , মুসলিম যাই হােক।যে দোষ ক্রটি বর্ণনা করা হল,তা যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মাঝে থাকে,তবেই তা গীবত হবে।
অন্যথায় হবে মিথ্যা অপবাদ আরােপ। মৃতদের গীবত করার বিধানঃ জীবিতদের গীবত যেমন হারাম,অনুরূপ মৃতদের গালি দেয়া,তাদের মন্দ বলা,তাদের দোষ বর্ণনা করা,গীবত করা হারাম।যদিও তারা জীবিত অবস্থায় গুনাহে লিপ্ত থেকে নিজেদের সময় বরবাদ বা বিনষ্ট করতে থাকুক।জীবিতদের অনুরূপ মৃতদের গীবত থেকেও বিরত থাকতে রাসূল(সাঃ)কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন । এ সম্পর্কে নিম্মে কয়েকটি হাদীস উদ্ধৃত করা হচ্ছে।
রাসূল (সঃ) ইরশাদ করেন
اذامات احدكم فد عوه ولا تقعوافيه
অর্থ:তােমাদের কেউ মারা গেলে,তাকে ছেড়ে দাও,তার গীবত কর না।(আবু দাউদ শরীফ- কিতাবুল বিররে ওয়াসসেলাহ)রাসূল(স:) ইরশাদ করেনঃ
لاتسبوا الموت فانهم افضواماقدموا
অর্থঃ মৃতদের গালি দিও না।কেননা,তারা নিজেদের আমলের প্রতিদান প্রাপ্তির স্থানে পৌঁছে।গেছে।(সহীহ ইবনে হিব্বান)
রাসূল(সঃ)ইরশাদ করেনঃ
اذكروامحاسن موتكم وكفواعن مساويهم
অর্থঃতেমরা মৃতদের সদগুণ সমূহ আলােচনা কর এবং তাদের মন্দ আলােচনা থেকে বিরত থাক।(আবু দাউদ শরীফ)
রাসূল ( সঃ ) ইরশাদ করেনঃ
لاتذكرواموتاكم الابخيرفانهم ان يكونوامن أهل الجنة تاتمواو وان يكون من اهل النار فحسبهم مافيه.
অর্থঃ তােমরা নিজদের মৃতদের সদগুণাবলী ব্যতীত আলােচনা করাে না।কেননা,তারা জান্নাতী হলে তাদের গীবত করে তােমরা গুনাহগার হবে,আর তারা জাহান্নামী হলে এ অনিষ্ট অর্থাৎ এর শাস্তিই তাদের জন্য যথেষ্ট । (এহইয়াউল উলুম)
তৃতীয়ত:মৃতদের গীবতে তাদের নিকটাত্মীয়- স্বজনের কষ্ট হয়
চতুর্থত:মৃত ব্যক্তি জাহান্নামী হলে এ শাস্তিই তার জন্য যথেষ্ট।তার গীবত নিরর্থক,আর সে জান্নাতী হলে তার গীবত নিষিদ্ধ।যে ক্ষেত্রে মৃতের জাহান্নামী হওয়া সন্দেহপূর্ণ , সে ক্ষেত্রেও শরীয়ত গীবত নিষিদ্ধ করেছে।
নিম্নে মৃতদের গীবতের অপকৃষ্টতা সম্পর্কিত কয়েকটি উপদেশমূলক ঘটনা বর্ণনা করা হচ্ছে।
প্রথম ঘটনা:হযরত আবু দারদা(রা:) বেশি বেশি কবরের কাছে বসতেন এবং কবরস্থানে,গমন করতেন।লােকেরা এর কারণ জিজ্ঞেস করলে,তিনি বলতেন,আমি এমন লােকদের কাছে বসি যারা আখিরাত স্মরণ করিয়ে দেয় এবং তাদের কাছ থেকে চলে আসলে,তারা আমার গীবত করাে না। কিন্তু জীবিতরা এর বিপরীত।(এহইয়াউল উলুম-কিতাবুল আমওয়াত)
দ্বিতীয় ঘটনা:লােকেরা হযরত আলী(রা:)কে জিজ্ঞেস করে আপনি কবরস্থানে বেশি বেশি যান কেন?জবাবে আলী(রা:)বললেন, কবরবাসী আখিরাত স্মরণ করিয়ে আমাদের উপকার সাধন করে।তারা আমাদে গীবত করে না।আমাদের সম্পর্কে কোন প্রকার অভিযােগ অনুযােগ করে না।এ কারণেই আমি তাদের সাহচর্য বেশি বেশি অবলম্বন করি এবং কবর স্থানে যাই।(ইহইয়াউল উলুম)
এ সম্পর্কে নিম্নে কিছু উপদেশ পূর্ণ আলােচনা উদ্ধৃত করা হচ্ছে:
প্রথম উপদেশ : মৃত্যুকালে কারাে মুখ থেকে কালেমা বের নাহলে অথবা চেহারা কালাে হয়ে গেলে অথবা কবরে আযাবের কোন উপকরণ-ভূ গর্ভস্থ কোন জীব,যেমন সাপ - বিচ্ছু ইত্যাদি প্রকাশ পেলে,যারা এ বিষয় অবহিত হয়।তাদের।উচিত এসব জনসাধারণের কাছে প্রকাশ না করা । পরন্তু তার গুনাহগার হওয়ার সংবাদও ফলাও করবেনা , এতে তার জীবিত আত্মীয় স্বজন
কষ্ট পাবে । এ ব্যাপারে এটাই পালনীয় বিধান।
দ্বিতীয় উপদেশ:মৃতের সমালােচনা বা দোষ - ত্রুটি ইত্যাদি বর্ণনা না করার যে বিধান আলােচিত হয়েছে,সে আলােচনার আলােকে ইয়াযীদ এবং হাজ্জাজের নিন্দাবাদ ও কোন ভাল কাজ নয়।যদিও কেউ কেউ,ইয়াযীদ এবং হাজ্জাজের কুফুরী প্রবক্তা।আল্লামা সাদ উদ্দীন তাফতানী(রহ:)নির্বাধে ইয়াযীদ এবং তার সহযােগী সাহায্যকারীদের লানত অভিশাপ করেন।
হযরত ইমাম আবু হানিফা (রহ:) এর সুত্রে এ বিষয়ে “ মাতালেবুল মাে'মেনীন ” গ্রন্থেও উদ্ধৃত হয়েছে , কিন্তু নির্ভরযােগ্য অভিমত হচ্ছে,এবিষয়ে নিরবতা অবলম্বনই শ্রেয়। কেননা , নিরবতা অবলম্বনেই সাবধানতা নিহিত রয়েছে।পক্ষান্তরে ইয়াযীদ বা হাজ্জাজের।দোষ-ত্রুটি বর্ণনায় এবং নিন্দাবাদে কোন সওয়াবও নেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks For Your Comment