Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

মঙ্গলবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

পর্দা যেভাবে একজন নারীকে রক্ষা করে

 পর্দা যেভাবে একজন নারীকে রক্ষা করে

 

পর্দা একজন নারীকে রক্ষা করে

ইসলাম বিশ্বজনীন চিরন্তন এক পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা । ইসলামে রয়েছে নারীর সম্মান , মর্যাদা ও সকল অধিকারের স্বীকৃতি। রয়েছে তাদের সতীত্ব সুরক্ষা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাপক কর্মসূচী । তাদের সম্মান , মর্যাদা ও সতীত্ব অক্ষুন্ন রাখতেই ইসলাম তাদের উপর আরােপ করেছে হিজাব বা পর্দা পালনের বিধান ।
‘ পর্দা ' শব্দটি মূলত ফার্সী । যার আরবী প্রতিশব্দ ‘ হিজাব ' । পর্দা বা হিজাবের বাংলা অর্থ আবৃত করা , ঢেকে রাখা , আবরণ , আড়াল , অন্তরায় , আচ্ছাদান , বস্ত্রাদি দ্বারা সৌন্দর্য ঢেকে নেয়া , আবৃত করা বা গােপন করা ইত্যাদি ।
পর্দা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান ; এর গুরুত্ব ও প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য । একজন নারীকে হাদীস শরীফের ভাষায় “ আওরত বলা হয়েছে । আওরত শব্দের অর্থ গুপ্ত , আবরণ , আচ্ছাদন বা আবৃত । সুতরাং নারীর নামেই বুঝা যায় নারীর জন্য পর্দা কতটা আবশ্যকীয় । পারিপার্শ্বিকতার বিবেচনায় বিবেকের দাবীও তাই । আর এ কারণে শরীয়তেও নারীর জন্য পর্দাকে ফরজ করা হয়েছে । প্রকৃতপক্ষে ‘ হিজাব বা পর্দা নারীর সৌন্দর্য ও মর্যাদার প্রতীক । নারীর সতীত্ব ও ইজ্জত - আবরুর রক্ষাকবচ । নারী - পুরুষ উভয়ের চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার অতি সহজ ও কার্যকর উপায় । এ বিধান অনুসরণের মাধ্যমে হৃদয় - মনের পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব ।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন , ' এ বিধান তোমাদের ও জন্য অধিকতর তাদের অন্তরের । পবিত্রতার কারণ । ' (সূরা আহযাব : ৫৩)
ইসলাম পর্দা পালনের যে হুকুম আরােপ করেছে , তা মূলত অশ্লীলতা ও ব্যভিচার নিরসনের লক্ষ্যে এবং সামাজিক অনিষ্টতা ও ফেতনা - ফাসাদ
থেকে পরিত্রাণের নিমিত্তেই করেছে ; নারীদের প্রতি কোনাে প্রকার অবিচার কিংবা বৈষম্য সৃষ্টির জন্য করেনি । বরং তাদের পবিত্রতা ও সতীত্ব রক্ষার্থেই তাদের উপর এ বিধানের পূর্ণ অনুসরণ অপরিহার্য করা হয়েছে ।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন , ' আল্লাহ তাে কেবল চান তােমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তােমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে । ' (সূরা আহযাব : ৩৩)
ইসলামের পর্দা বিধান অনেকের কাছেই গুরুত্বহীন ও অস্পষ্ট হয়ে আছে । তারা পর্দাকে প্রগতির অন্তরায় ও অবরােধ মনে করেন । তাদের ধারণা- মুসলিম নারীরা পর্দার কারণে নিজেদেরকে ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী করে রাখবে , এমনকি প্রয়োজনেও ঘর থেকে বের হতে পারবে না এবং কোন কাজেও অংশ গ্রহণ করতে পারবে না । ধর্ম প্রচারক ও দায়ীগণের পর্দাবিধানের নির্দেশনাকে তারা ধর্মান্ধতা ও বাড়াবাড়ি ,মনে করেন যা নিতান্তই অজ্ঞতা ও অযৌক্তিক । পর্দা ইসলামের পূর্ণ ফরজ বিধান । মুসলিম নর - নারী সকলের জন্যই পর্দা আবশ্যক । নারী ও সমাজের পবিত্রতা রক্ষায় মহিলার জন্য পুরাে শরীর আবৃত করা ফরজ । কেননা , মহিলারা প্রকৃতিগতভাবেই দুর্বল এবং পুরুষের পাশবিক আচরণের মুখে অসহায় । সভ্যতা - সংস্কৃতি , শিক্ষা , প্রগতি কোনাে কিছুর দোহাই তাদেরকে এ সকল পাশবিকতা থেকে রক্ষা করতে পারে না । এ জন্যই আল্লাহ পর্দার বিধান দিয়েছেন , যাতে নারীদের ইজ্জত - আবরু রক্ষা হয় । তবে এ পর্দা বিধানের উদ্দেশ্য তাদেরকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করা নয় । আমাদের সামাজিক ও নৈতিক অবকাল অধঃপতনের সমাজেও আমরা লক্ষ্য করছি ।
নারী পর্দার মধ্যে বেড়ে ওঠে , তারা বখাটেদের অত্যাচার - নির্যাতন থেকে মুক্ত থাকে । সাধারণত পর্দানশীন নারীদের উত্ত্যক্ত করতে দুষ্টরা দ্বিধাবােধ করে , তাদের প্রতি কিছুটা হলেও মমত্ববােধ ও দয়া অনুগ্রহ প্রদর্শন করে ।

আর এ কথা স্বয়ং আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন , ' হে নবী , আপনি আপনার স্ত্রী , কন্যা ও মুমিন নারীদের বলুন , তারা যেন তাদের জিলৰাবের ( চাদরের ) কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয় । এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে , ফলে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না । আল্লাহ ক্ষমাশীল করুণাময় । ' ( সূরা আহজাব , আয়াত : ৫৯ )
এ সূরারই ৩৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নারীদের গৃহে অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছেন । এবং বর্বর যুগের সৌন্দর্য প্রদর্শনে নিষেধ করেছেন এর অর্থ হলাে- মাথা , মুখ , ঘাড় , গলা , বুক , হাত , পা ইত্যাদিকে আবৃত রাখা , যেন মানুষ তা দেখতে না । পায় । একটি বিষয় বিশেষ লক্ষনীয় যে , মুখমন্ডল । আবৃত করা ফরজ কিনা তাতে পূর্বযুগের ওলামায়ে । কেরামের মধ্যে মতভেদ থাকলেও , তা ঢেকে রাখা হবে । উত্তম ও সুন্নাহ সমত- এতে কোনাে মতভেদ নেই । তবে ফেতনা ও সামাজিক অনাচারের ভয় থাকলে সবার মতেই মুখ ঢেকে রাখা ফরজ ; একান্ত প্রয়ােজন  হলে ভিন্ন কথা । আর বর্তমান যুগে যেহেতু ফেতনা ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করেছে , তাই এ যুগের ওলামায়ে কেরামের সর্বসম্মত অভিমত হল নারীদের মুখ ঢেকে রাখা ফরজ । সামগ্রিকভাবে মুখ আবৃত করাই উচিত ও নিরাপদ । আর কোরআনের বিভিন্ন  নির্দেশের আলােকে মুখ আবৃত রাখার মতটিই জোরদার । কোনাে মুসলিম নারীরই উচিত নয় , আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে নিজের জীবনের বরকত - কল্যাণের উৎস নষ্ট করে দেওয়া । বেপর্দা হয়ে অঙ্গ - প্রত্যঙ্গ অনাবৃত করে কোনাে মহিলা কোথাও জাগতিক স্বার্থ লাভ করেন না । একান্তই শয়তানের প্ররোচন অমুসলিম বা পরকালভােলা নারীদের অনুকরণের প্রবণতায় তারা এরূপ কঠিন হারামে লিপ্ত হন । হিজাব পালনে কারাে জাগতিক কোনাে ক্ষতি হয় না , কোনাে কর্ম বা প্রয়ােজন ব্যাহত হয় না , পারিবারিক - সামাজিক সম্মান বা মর্যাদায় ঘাটতি আসে । বরং হিজাব পরিহিতা অতিরিক্ত সম্মান - মর্যাদা লাভ করেন এবং আল্লাহর অফুরন্ত দয়া , কল্যাণ ও বরকত পেয়ে থাকেন । আল্লাহ বলেছেন , দৃষ্টিসংযম পর্দাপালন ও লজ্জাস্থানের হেফাজত দুনিয়া ও আখেরাতের পবিত্রতা - সফলতা অর্জনের উপায় । এ থেকে দূরে সরে গেলে ধ্বংস ও শাস্তি অনিবার্য । উলঙ্গপনী ও বেহায়াপনা চতুষ্পদ জঞ্জর স্বভাব । যখন মানুষের মধ্যে এ ধরনের স্বভাব পাওয়া । যাবে , তখন মানুষের পতন অবশ্যম্ভাবী ও অবধারিত । মানুষকে আল্লাহ রাব্বল আলামীন যে সম্মান ও মান মর্যাদা দিয়েছেন , সে তা থেকে নিচে নেমে আসবে । আল্লাহ রাব্বল আলামীন তাকে যে সব নেয়ামতরাজি দান করেছেন , তা থেকে সে নীচে নেমে আসবে । যারা উলঙ্গপনা , ঘরের বাহিরে যাওয়া ও নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশাকে সৌন্দর্য বা নারীর অধিকার বলে দাবি করে , বাস্তবে তারা মানবতার দুশমন । তারা মানুষকে মনুষ্যত্ব থেকে বের করে পশুত্বের প্রতি ধাবিত করছে । তারা যদিও নিজেদের সভ্য বলে দাবি করছে , কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তা অসভ্য ও অমানুষ । মানবতার উন্নতির সম্পর্কই হল , আত্ম - সম্ভ্রম হেফাজত করা ও তার দৈহিক সৌন্দর্যকে রক্ষা করা । মানুষ যখন তার আবরণ ফেলে দিয়ে নিজেকে উলঙ্গ করে ফেলে তখন তার অধঃপতন নিশ্চিত হয়ে পড়ে ; মানবতার উন্নতি ও অগ্রগতি ব্যাহত হয় । নারীরা যখন পর্দার আড়ালে থাকে , তখন তাদের মধ্যে আত্ম - সম্মান ও আত্মমর্যাদাবােধ অবশিষ্ট থাকে । ফলে তার মধ্যে একটি রূহানী বা আধ্যাত্মিক শক্তি থাকে , যা তাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে । আর নারীরা যখন রশি ছেড়া হয়ে যায় , আবরণ মুক্ত হয় , তখন তার মধ্যে তাঁর প্রবৃত্তি
শক্তিশালী হয়- যা তাকে সৌন্দর্য প্রদর্শন ও অবাধ মেলা - মেশার প্রতি আকৃষ্ট করে । সুতরাং , একজন মানুষের সামনে দুটি পথ । খোলা থাকে । যখন সে দ্বিতীয়টির উপর সন্তুষ্ট থাকে , তখন তাকে অবশ্যই প্রথমটিকে কুরবান দিতে হবে । আর তখন তার অন্তরে আত্মমর্যাদাবােধ বলতে কোন কিছু থাকবে না । তখন সে অপরিচিত পুরুষদের সাথে মেলামেশা সহ যাবতীয় সব ধরনের অপকর্মই করতে থাকবে । আর এ ধরনের মেলা মেশার ফলে মানব প্রকৃতি ধ্বংসের মুখােমুখি হবে । লজ্জাহীনতা বৃদ্ধি পাবে , আত্মমর্যাদা ও সম্মানবোধ আর বাকী থাকবে না । মানুষের মধ্যে অনুভূতি থাকবে না এবং তার জ্ঞান - বুদ্ধির অপমৃত্যু ঘটবে । নারীরা তাদের প্রতি পুরুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার লক্ষ্যে নিষিদ্ধ সাজ - সজ্জা গ্রহণে ও উলঙ্গপনায় পরম্পর প্রতিযােগিতায় মেতে উঠেছে । ব্যাপারটি আজ এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে , মনে করা হচ্ছে । * যেন- যে নারী যত বেশি দেহ থেকে পােশাক খুলতে পারবে ; সে নারী তত বেশি মূল্যায়িত হবে । তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শনের জন্য নিত্য নতুন পন্থা অবলম্বন করছে । এর ফলে তারা একদিকে তাদের চরিত্রকে কলঙ্কিত করছে , অনুরূপভাবে তারা তাদের অনেক পয়সা ও এ পথে ব্যয় কৰছ যার ফলশ্রুতিতে নারীরা বর্তমান সমাজে নিকৃষ্ট ও পঁচা- গন্ধ পণ্যে পরিণত হয়েছে । আবার নিজেদের ঠিকানা । জাহান্নামের অতলে নির্ধারণ করছে ।


নারীদের সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতার কারণে সামাজিক যে অবক্ষয় সৃষ্টি হচ্ছে , তা হল

 
. সৌন্দর্য প্রদর্শনের ফলে পুরুষদের চরিত্র । ধ্বংস হয় । বিশেষ করে যুৱ সমাজ ও প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেরা সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী নারীদের কারণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয় এবং তাদেরকে বিভিন্ন । ধরনের অশ্লীল কাজ ও অপরাধের দিকে ঠেলে দেয় ।
২. পারিবারিক বন্ধন বংস হয় । এবং পরিবারের সদস্যদের মাঝে অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলা
দেখা দেয় । শুধু তাই নয় , পরকীয়া থেকে বিবাহ বিচ্ছেদ অহরহ ঘটে থাকে এই পর্দাহীনতার দ্বারা ।
৩ , সামাজিক ব্যাধির সাথে সাথে সমাজে বিভিন্ন ধরনের মহামারি ও রােগ - ব্যাধি দেখা দেয় । রাসূল সা . বলেন , “ কোন কওমের মধ্যে কোন অশ্লীল কর্ম ও ব্যভিচার দেখা দেয়ার পর তারা যখন তা প্রচার করে , তখন তাদের মধ্যে এমন মহামারি ও দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় , যা তাদের পূর্বে যারা অতিবাহিত হয়েছে তাদের মধ্যে দেখা যায়নি " ( শুআবুল ঈমান বায়হাকী- ৩৩১৪ ) ,
৪. চোখের ব্যভিচার ব্যাপক হারে সংঘটিত হয় এবং যে কারণে চোখের হেফাজত করা কঠিন হয়ে যাবে । রাসূল ( বলেন , “ চোখ দুটির ব্যভিচার হল দৃষ্টি " । ( সহীহ মুসলিম ]
৫. আসমানি মুসিবতসমূহ নাযিল হওয়ার উপযুক্ত হবে । এমন এমন বিপদের সম্মুখীন হতে হবে , যেগুলাে ভূমিকম্প ও আণবিক বিস্ফোরণ হতেও মারাত্মক ।

আল্লাহ রাব্বল আলামীন কুরআন কারীমে এরশাদ করে বলেন , “ আর যখন আমি কোন জনপদ ধ্বংস করার ইচ্ছা করি , তখন তার সম্পদশালীদেরকে ( সৎকাজের আদেশ করি । চঃপর তারা তাতে সীমালঙ্ঘন করে । তখন তার উপর নির্দেশটি । সাব্যস্ত হয়ে যায় এবং আমি তা সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করি । ” ( সূরা আল - ইসরা : ১৬ )

হে সম্মানিতা মা ও বােনেরা ! দুনিয়ায় নিজেদের সম্মান , ইজ্জত - আবরু ও অধিকার রক্ষায় এবং নিরাপত্তা ও সুস্থতার সাথে জীবন যাপন করতে , পরিশেষে পরকালীন নাজাতের জন্য পর্দার হুকুম মেনে চলুন । আল্লাহ আমাদেরকে সফলতার পথে চলার তৌফিক দান করুন এবং ধ্বংসের পথ থেকে দূরে রাখুন । আমিন ।

২টি মন্তব্য:

Thanks For Your Comment

Post Top Ad

Your Ad Spot

পৃষ্ঠাসমূহ